Wednesday, July 16, 2008

সচলায়তন ব্লক করা নিয়ে মিডিয়া

মত প্রকাশ
সচল থাকুক সচলায়তন

সুমন রহমান - বাংলাদেশ থেকে ‘সচলায়তন’ নামক ব্লগটি দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের সর্বত্র যে ব্লগটি ইন্টারনেটে দেখা ও পড়া যাচ্ছে, সেটির দেখা বাংলাদেশ থেকে না পাওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক। কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটা ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন এ ব্লগটির মালয়েশিয়া-প্রবাসী কর্ণধার। এর অর্থ দাঁড়ায়, ব্লগটি হয়তো বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ রকম ঘটে থাকলে সেটি বাংলাদেশে এ ধরনের প্রথম ঘটনা এবং সংগত কারণেই এ সংবাদটি প্রথম আলোসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছে।

ইন্টারনেটে ব্লগ লেখালেখির ঘটনা পশ্চিমে প্রায় দশক-পুরোনো হলেও বাংলা ভাষায় মাত্র বছর কয়েকের। অন্যান্য দেশে বাঘা বাঘা পন্ডিত থেকে খ্যতনামাদের অনেকেই ব্লগে লেখেন, কিন্তু বাংলাদেশে ব্লগ নামক প্লাটফর্মটি গুটিকয় শিক্ষানবিশের জন্য লেখকের আত্মাভিমান তৈরির জায়গা হিসেবেই যেন এখনো রয়ে গেছে। অবশ্য কে প্রতিষ্ঠিত লেখক আর কে শিক্ষানবিশ, সেটি ব্লগের মাথাব্যথার কারণ নয়। ব্লগ মুক্তচিন্তা ও চিন্তার সরাসরি আদানপ্রদানের জায়গা। সেখানে লেখক-পাঠক, খ্যাতিমান-শিক্ষানবিশ মিলেই একটা চিন্তাকে টগবগ করে ফুটতে সাহায্য করেন। ফলে লেখকের সঙ্গে পাঠকের, বিষয়ের সঙ্গে বিষয়ীর, ঘটনার সঙ্গে ঘটকের ভেদ ঘুচে যাওয়ার কথা ব্লগের পরিমন্ডলে। ব্লগের মতো একটি উত্তর-আধুনিক মাধ্যমের এটিই বড় বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আদৌ কি হয়েছে সেটি বাংলাদেশে?

বাংলাদেশে প্রথম যে ব্লগটি বড় স্কেলে দৃশ্যমান হয় সেটির নাম ‘সামহোয়ারইনব্লগ’। এটি আকারে বেশ বড়, প্রায় পনের হাজার সদস্য সেখানে নিবন্ধন করেছেন বলে জানা যায়। সামহোয়ারইনব্লগ আকারে বড় এবং উন্নুক্ত। যে কেউ এর সদস্য হয়ে লেখা শুরু করে দিতে পারেন। অপরদিকে সচলায়তন মূলত সামহোয়ারইনব্লগ ভাঙা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, আকারে অনেক ছোট এবং এখানে লেখক হিসেবে ঠাঁই পেতে হলে রীতিমতো বর্ষব্যাপী সাধনা করতে হয়। সদস্যদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সামহোয়ারইনব্লগ বেশ ঢিলেঢালা রীতি অনুসরণ করলেও সচলায়তন রীতিমতো কঠোর। এর পরিণামও হয়েছে দুই রকম: ঢিলেঢালা সামহোয়ারইন যেখানে ভার্চুয়াল ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ও ভার্চুয়াল ‘রাজাকার’দের পারস্পরিক বিষোদগারের কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, সেখানে কর্ণধারশাসিত সচলায়তন হয়ে উঠেছে সুশীল ‘মুক্তচিন্তা’র প্লাটফর্ম। সামহোয়ারইনব্লগ যখন চরম নৈরাজ্য, সচলায়তনে তখন পরম নিয়ন্ত্রণ। চরম আর পরমের এ দুই রকম নমুনা দেখে বুঝতে বাকি থাকে না যে ব্লগের মতো উত্তর-আধুনিক মাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো প্রস্তুতি আমাদের এখনো নেই।

মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি সংগত কারণেই সামনে এসে যায়: সম্প্রতি ঢাকায় স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে একজন মুক্তিযোদ্ধার লাঞ্ছনার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সচলায়তন - এ যে সহিংস বিক্ষোভ লতিয়ে উঠেছে, তাকে নীরবে ছাড় দেওয়ার মতো অবকাশ কি একটি আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আছে? নিশ্চিতভাবেই নেই, আর নেই বলেই হয়তো বাংলাদেশের আন্তর্জালে সচলায়তন অদৃশ্য হয়ে গেছে। কিন্তু আরও কথা থেকে যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রকাশ্য লাঞ্ছনার ঘটনায় অদ্যাবধি রাষ্ট্রের যে নীরবতা, তা কি রাষ্ট্রের পক্ষে আত্মঅবমাননার শামিল নয়? দেশপ্রেমিক মানুষের অহংকার তবে কোন অরণ্যে গিয়ে শান্তি খুঁজবে?

অদ্ভুত এই দশা! উত্তর-আধুনিক ব্লগমাধ্যমে সচলায়তনকে দেখা গেছে কঠোর পরিচালনা, নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকার, নিষিদ্ধকরণ, ভাবাদর্শের প্রচারনা, নিজেদের চারপাশে সুস্পষ্ট সীমানা ইত্যাদি মেনে পরিচালিত হতে, যেগুলো আদতে আধুনিক জাতিরাষ্ট্রব্যবস্থায় দেখা যায়। আবার, তার স্বাধীনতার সৈনিকদের প্রকাশ্য লাঞ্ছনার ঘটনায় পদক্ষেপশুন্য থাকা খোদ বাংলাদেশের জন্য যেন এক উত্তর-আধুনিক ঔদাস্য, ষড়যন্ত্র যদি নাও হয়! অদ্ভুত এই নাট্যমঞ্চ! যার যে ভুমিকায় অভিনয় করার কথা নয়, সে সেই ভুমিকায় অভিনয় করে চলছে!

লোহার বাসর বানালে ছিদ্র সেখানে থাকেই, সচলায়তন - এর সহিংস বিক্ষোভ হয়তো সেই ছিদ্রপথ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। অন্য একটি ব্লগে এ নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। ব্লগের কৌশল আসলে কী হবে? নিয়ন্ত্রণ, না নৈরাজ্য? একজন বললেন, নিয়ন্ত্রিত নৈরাজ্য। সুন্দর নির্দেশনা! কিন্তু কথা আসে, কতটুকু নিয়ন্ত্রণ আর কতটুকু নৈরাজ্য? নিয়ন্ত্রণের ভার কে নেবে, ব্লগাধিপতি, নাকি রাষ্ট্র? সেসব নিয়ে আরও বহু বহু ভাবনার জায়গা আছে। ব্লগারকে ভাবতে হবে, আবার রাষ্ট্রকেও।

স্বীকার করতেই হবে যে সামহোয়ারইনব্লগ ও সচলায়তন বাংলা ভাষায় ব্লগ লেখালেখির দ্বার খুলে দিয়েছে, নানা বিষয়ে চমৎকার সব লেখা হাজির করেছে, নবীন লেখকদের জন্য রীতিমতো প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকও সেসব জায়গায় এসে ভিড় করছেন দেখতে পাই। আবার, ব্লগ শুধু যে লেখালেখি ও চিন্তার আদানপ্রদানেই সীমিত আছে তা নয়, বরং নিজেদের একটা কমিউনিটিও বানিয়ে নিচ্ছে এবং একটা সংঘবদ্ধতার শক্তির জানানও দিচ্ছে। সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশিদের এহেন সংঘবদ্ধতা যেকোনো বিচারেই স্বাস্থ্যকর, জাতিরাষ্ট্রীয় বিবেচনায় তো বটেই। তাকে পিঠ দেখানো মোটেই সুলক্ষণ নয়।

ব্লগ একটি নতুন গণমাধ্যম এবং এটি পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অধীন এমনটাও বলা যাচ্ছে না। এ কারণে সচলায়তন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও প্রক্সি সার্ভার দিয়ে এই ব্লগসাইট দেখা যাচ্ছে। ফলে নিয়ন্ত্রণের পুরোনো কৌশল এখানে খুব যে কার্যকর এমনও না। আবার, রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে যা বুঝায়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও সেই একই জিনিস বুঝাবে? যিনি স্বাধীন মত প্রকাশ করছেন, তিনি অন্যের স্বাধীন মত প্রকাশে কতটুকু বিঘ্ন সৃষ্টি করছেন? অধিকার ও দায়িত্বের সীমা কোথায়? ব্লগ প্রশ্নে এসব বিষয়ের মীমাংসা খোদ পশ্চিমা বিশ্বেই ঠিকমতো হয়নি। অনেক রাষ্ট্রকে দেখা যায় ব্লগের এই দামাল চরিত্রটি কিছুমাত্রায় মেনে নিয়েছে, আবার লেখায় ‘আপত্তিকর’ বিষয় পেলে এর লেখক হিসেবে ব্লগারের শাস্তি হচ্ছে, এমনটাও দেখা যায় অনেক দেশে।

সচলায়তনকে কোনো বিপ্লবী গোষ্ঠী বা কঠোর গ্রুপ বলে মনে হয়নি কখনোই। রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধের প্রতি সার্বিকভাবে এরা শ্রদ্ধাশীল, এমনটাই লেগেছে। গোষ্ঠীগত অহম বা আভিজাত্যবোধ আছে ওদের, সে অন্য প্রসঙ্গ। ব্লগের পরিবেশ এর লেখকদের যে অবারিত স্বাধীনতা দিয়েছে, তাকে তারা আরও দায়িত্বশীল উপায়ে কাজে লাগাবেন, এমন প্রত্যাশা হয়তো ছিল অনেকের। কিন্তু আমি মনে করি, তাদের যে ভুল তা স্রেফ শিক্ষানবিশির ভুল, এর ফলে তাদের যদি সত্যি সত্যিই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে, তবে তা লঘুপাপে গুরুদন্ড হয়ে গেছে। অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেত।

আমরা বরং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশি তরুণদের পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার, একে অপরের মাঝে দেশকে খুঁজে ফেরার এই প্রয়াসটিকে চলতে দিলেই সুবুদ্ধির পরিচয় দেব। সচল থাকুক সচলায়তন।

সুমন রহমান: কবি, কথাসাহিত্যিক।

©
দৈনিক প্রথম আলো
মত প্রকাশের স্বাধীনতা
আমাদের অচলায়তনে বন্দী ‘সচলায়তন’


পল্লব মোহাইমেন - ১৭ জুলাই সকালে প্রথম আলোর ‘কলাম ১’ থেকে জানা গেল, ইন্টারনেটে ‘সচলায়তন’ (www.sachalayatan.com) নামের একটি বাংলা ব্লগসাইট বাংলাদেশ থেকে দেখা বা পড়া যাচ্ছে না। ওয়েবব্লগ এখন জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী একটি মাধ্যম হয়ে উঠছে। যে কেউ এসব সাইটে নিজের মত প্রকাশ করতে পারে। মুক্তচিন্তা আর নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশের একটি সর্বজনীন জায়গা হয়ে উঠেছে ব্লগসাইট। অনেক ক্ষেত্রে ‘নিউ জার্নালিজম’ বা সংবাদের নতুন ধারার উৎস হিসেবেও ব্লগ স্বীকৃতি পাচ্ছে। বাংলা ব্লগও এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আবাসি-অনাবাসী মননশীল বাংলাদেশিদের কাছে। তাই বাংলা ব্লগসাইট ‘সচলায়তন’-এ এ দেশ থেকে ঢুকতে না পারার ঘটনা অবহেলা করার মতো ব্যাপার নয়।

‘সচলায়তন’ যারা পরিচালনা করে, তাদের কোনো কারিগরি ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তো বটেই, অন্যান্য অঞ্চল থেকেও এ ব্লগসাইটে ঢুকতে সমস্যা হতো। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল এলাকার বাইরে সারা পৃথিবীর সব জায়গা থেকে ‘সচলায়তন’ খোলা যাচ্ছে।

১৮ জুলাই ‘সচলায়তন’ কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো ঘটনার একটি ব্যাখ্যা দেয়। প্রবাসী এক বন্ধুর ই-মেইলের মাধ্যমে সেই ব্যাখ্যাটি বাংলাদেশে বসে পাই। সচলায়তন কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৫ জুলাই বিকেল থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে সাইটটি দেখা যাচ্ছে না। সচলায়তন কর্তৃপক্ষ তাদের সার্ভারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে যে, ‘‘সার্ভার প্রান্তে এমন কোনো ত্রুটি নেই, যার কারণে বিশেষ কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের অধিবাসীদের ‘সচলায়তন’ অ্যাকসেস (প্রবেশ) করতে সমস্যা হবে।’’ ব্যাখ্যা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সাবমেরিন কেব্ল নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিসিএলের গেটওয়েতে (প্রবেশপথ) কোনো ত্রুটি বা এ সাইটে ঢোকার পথ বন্ধ করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সবশেষে দুটি বিষয় বিবেচ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে ব্যাখ্যাটিতে: ১. ‘সচলায়তন’-এর ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। ২. বিটিসিএল প্রান্তে কোনো কারিগরি ত্রুটি ঘটেছে।

বিটিসিএল বা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছু বলেনি। এ দেশে এর আগে কোনো ওয়েবসাইটে ঢোকার পথ বন্ধ করা হয়নি বা কোনো ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ হয়নি। এ অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন। সাবমেরিন কেব্ল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পর ইন্টারনেটে যাওয়া-আসার পুরো ব্যাপারই ঘটে সাবমেরিন কেব্ল তথা বিটিসিএলের গেটওয়ের মাধ্যমে। এ গেটওয়েতে যেকোনো ওয়েবসাইটকে আটকে ফেলা (ব্লক করা) যায়। ওয়েবসাইটগুলোর আসল পরিচয় সংখ্যাভিত্তিক আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ঠিকানায়। গেটওয়েতে যেকোনো আইপি ঠিকানায় যাতায়াত বন্ধ করা যায়। আগে বাংলাদেশে কৃত্রিম উপগ্রহনির্ভর (ভি-স্যাট) ইন্টারনেট ছিল, তাই অসংখ্য গেটওয়ে দিয়ে ইন্টারনেটে যাতায়াত করা যেত। তখন নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে যাতায়াত বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। এখন সেটা সহজ।
‘সচলায়তন’-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ১৮ জুলাই ভোরে বাংলাদেশ থেকে সাইটটি খোলা গেছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই সময়ে ভি-স্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেট যোগাযোগ চালু ছিল। আবার যখন সাবমেরিন কেব্ল গেটওয়ের মাধ্যমে সংযোগ চালু হয়েছে, ‘সচলায়তন’ বন্ধ হয়েছে। তাই বোঝা যাচ্ছে, সাবমেরিন কেব্ল নেটওয়ার্কের গেটওয়েতে সচলায়তনের আইপি ঠিকানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইটে ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়−এমন দেশের মধ্যে চীন ও উত্তর কোরিয়া বিশেষ উল্লেখযোগ্য। দুটি দেশই অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক সরকার দ্বারা পরিচালিত। বাংলাদেশে সচলায়তনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নীরবতা দেখে মনে হয়, কোনো ‘অশরীরী’ শক্তি এ কাজ করেছে। যদি সত্যিই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়ে থাকে বা কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এর ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। নইলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্য অধিকার বা অবাধ প্রবাহের নীতিগুলোর প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানো হয়। যেখানে বাংলাদেশ ‘তথ্য অধিকার আইন’ অনুমোদন করতে যাচ্ছে, সেখানে তথ্যপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি কাম্য হতে পারে না।

‘সচলায়তন’-এ কয়েক দিনে কী লেখা প্রকাশিত হয়েছিল? নানা সুত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজাকারবিরোধী, নিজামীর মুক্তির বিপক্ষে এবং জামায়াতের মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধার লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু লেখা (পোস্ট) এবং মন্তব্য এ সাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। কিছু ছবি এবং উগ্র ও হঠকারী কথাবার্তা ছিল, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এসব উগ্রতা থেকে বিরত থাকাই ভালো। তার পরও রাষ্ট্রবিরোধী বা ক্ষতিকর এমন কোনো কিছু যদি থাকে, তবে তার যৌক্তিকতা তুলে ধরে সাইটের প্রকাশকদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া যেতে পারে। কোনো একটি পৃষ্ঠা বা লেখার পরিমার্জনা করতে বলা যেতে পারে, কিন্তু কোনো ওয়েবসাইটই নির্দিষ্ট একটি দেশে বন্ধ করা উচিত নয়।

এ যুগে প্রযুক্তির বিস্তারকে কোনোভাবেই যেমন ঠেকানো যাবে না, তেমনি স্বাধীন মত প্রকাশকেও থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়; আর তা প্রযুক্তির কারণেই। চীন বা উত্তর কোরিয়ায় অনেকেই নিষিদ্ধ ঘোষিত ওয়েবসাইটগুলো দেখে বিকল্প উপায়ে−প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে। বাংলাদেশ থেকেও অনেকে ‘সচলায়তন’ দেখছে প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে। আবার বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর সব জায়গা থেকেই তো এ ব্লগসাইটটি দেখা যাচ্ছে। যারা বিদেশে বসবাস করছে, দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে যারা প্রবাসী, তারা কিন্তু ঠিকই দেখতে পারছে ‘সচলায়তন’। আমরা যারা বাংলাদেশের নাগরিক এবং এ দেশের অধিবাসী, শুধু এ ভুখন্ডে থাকার কারণেই তারা এ সাইটটি দেখতে পারছি না। আমাদের অচলায়তনে আমরা বন্দী করে ফেলেছি ‘সচলায়তন’কে।

© দৈনিক প্রথম আলো
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
'সচলায়তন' ব্লগ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

ঢাকা, জুলাই ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) - সচলায়তন নামে একটি বাংলা ইন্টারনেট একটি ব্লগ বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বাংলাদেশের পাঠকরা ব্লগটি দেখতে পাচ্ছেন না।

সচলায়তনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন অরূপ কামাল টেলিফোনে মালয়েশিয়া থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সা¤প্রতিক একটি লেখা প্রকাশের পর বাংলাদেশে ব্লগটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।"

তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ব্লগটি দেখা না গেলেও বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে সচলায়তনে ঢোকা যাচ্ছে। এর ঠিকানা হচ্ছে- www.sachalayatan.com

তিনি জানান, সচলায়তন একটি অনলাইন লেখক সমাবেশ, যেখানে সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়সহ সমসাময়িক বিষয়বস্তুর ওপর লেখালেখি প্রকাশিত হয়।

© বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
প্রথম আলো, কলাম ১
সচলায়তন নিষিদ্ধ?

নিজস্ব প্রতিবেদক - সচলায়তন নামের ইন্টারনেটভিত্তিক একটি বাংলা ব্লগকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার অভিযোগ করেছে ব্লগ কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ থেকে ওই ব্লগ যাঁরা পড়েন এবং যাঁরা সেখানে লেখালেখি করেন তাঁরাও একই অভিযোগ তুলেছেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিটিসিএলের ইন্টারনেটবিষয়ক দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান এ বি এম হাবিবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে চাননি। ব্লগ কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের কোনো কারিগরি সমস্যা নেই। এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত। তবে বাংলাদেশ থেকে ব্লগটি দেখা না গেলেও বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে অনলাইনে এ ব্লগে ঢোকা যাচ্ছে। ব্লগটির ঠিকানা www.sachalayatan.com।

©
দৈনিক প্রথম আলো

ব্লক করা সাইটে ঢুকতে হলে

সফটওয়্যার (ব্যক্তিগত ভাবে টেস্ট করা)
  • Psiphon: এই ফ্রি সফটওয়্যারটি ইন্সটল করে নিলে যে কোনো ব্লক করা সাইটে ঢোকা যাবে। সফটওয়্যারটি আপনার ব্যক্তিগত কম্পিউটারকে এনক্রিপ্টেড সার্ভারে রূপান্তরিত করবে, যা দিয়ে যে কোনো ওয়েবসাইটে আরামে ঢোকা যাবে। ভালো স্পিড। যে কোনো অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করে। হাইলি রেকমেন্ডেড।
অন্য সফটওয়্যার
  • Tor: ফ্রি, যে কোনো অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করে। রিভিউ বেশ ভালো।
ইন্টারনেটে ফ্রি প্রক্সি সার্ভার লিস্ট (ব্যক্তিগত ভাবে টেস্ট করা)
নিচের সাইটগুলি থেকে কোনো ওয়েবপেজে গেলে আপনি থার্ডপার্টি প্রক্সি থেকে সেই পেজে ঢুকবেন। ধরা যাক আপনি বাংলাদেশ থেকে 'সচলায়তন' সাইটে ঢুকতে চান। সেক্ষেত্রে সাইটগুলি আপনাকে অন্য কোনো দেশের, যেমন আমেরিকার, প্রক্সি থেকে সাইট অ্যাকসেস দেবে।
নিচে আরেকটি তালিকা আছে।

ফায়ারফক্স এর জন্য এক্সেনশন
  • SwitchProxy Tool: এই টুল ব্যবহার করে একাধিক প্রক্সি ব্যবহার ও প্রক্সি বদলানো যাবে।
অন্য উপায় (ব্যক্তিগত ভাবে টেস্ট করা)
  • Google, Yahoo, MSN, Altavista প্রভৃতি সার্চ ইঞ্জিনের ট্রানস্লেশন সুবিধা ব্যবহার করে ব্লকড সাইট দেখা সম্ভব। যেমন, http://www.google.com/translate_t ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে "Translate a Web Page" টেকস্টবক্সটিতে সাইটের অ্যাড্রেস দিয়ে সেই সাইটে ঢোকা সম্ভব। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই সুবিধা কাজ করে না।
  • ব্লগ সাইটের এটম, আরএসএস থেকে। যেমন, গুগলরিডার কিংবা এই ধরণের অন্য থার্ডপার্টি ওয়েব-বেসড এগ্রেগেটরে সাইট অ্যাড্রেস দিয়ে সব পোস্ট পড়া সম্ভব। এক্ষেত্রে মন্তব্য এবং অন্য কিছু সুবিধা অনুপস্থিত থাকবে।
আরও ইন্টারনেটে ফ্রি প্রক্সি সার্ভার লিসআপনাদের কোনো আইডিয়া/প্রস্তাব থাকলে যদি মন্তব্যে দিয়ে দেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
কোনো প্রক্সি ব্লক করা হলে, অন্য কথায় লিস্টে দেয়া কোনো সাইট বাংলাদেশ থেকে কাজ না করলে আমাকে জানান। আমি লিস্ট আপডেট করে দেবো।